ঢাকার বেশিরভাগ বিল্ডিং রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট ছাড়াই ব্যবহারিত হচ্ছে, অথচ কোনো বিল্ডিং ব্যবহারের পূর্বে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের দ্বারা প্রদত্ত রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেওয়া বাধ্যতামূলক ।
রাজউক ঢাকা শহরে বিল্ডিং রেগুলেশন এবং আবাসন আইন প্রয়োগের জন্য দায়বদ্ধ । ২০০৮ সালে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট অব বাংলাদেশের (আইএবি) বা ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ার্স অফ বাংলাদেশ (আইইবি) এর কোনও অনুমোদিত সদস্য দ্বারা রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। রাজউক একটি বিল্ডিং সমাপ্তির পরে "বিল্ডিং অকুপেন্সি সার্টিফিকেট" এর বিধান কার্যকর করার জন্য ঢাকা মহানগর বিল্ডিং নির্মাণ আইন ২০০৮ এর ১৮ নম্বর ধারায় সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে সম্পন্ন বিল্ডিং ব্যবহারের আগে রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট গ্রহণ বাধ্যতামূলক।
রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট কেন প্রয়োজনীয়
রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দ্বারা রাজউক অনুমোদিত নকশা / আঁকার ভিত্তিতে সত্যই একটি বিল্ডিং নির্মিত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায় ।
রাজউক বা কর্তৃপক্ষ বিল্ডিংটি সম্পূর্ণ / আংশিক ব্যবহার করার আগে রাজউকের অনুমোদিত নকশা অনুযায়ে নির্মিত কিনা এবং ২০০৮ সালের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন অ্যাক্টের কোনও আইন লঙ্ঘন করেনি তা নিশ্চিত করার জন্য ভবনটি পরিদর্শন করবে। তারপরে কর্তৃপক্ষ একটি রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট প্রদান করবে যা নিশ্চিত করে যে ভবনটি রাজউকের অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী নির্মিত হয়েছিল। রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট পাওয়ার পরে একটি বিল্ডিং ব্যবহার শুরু করা উচিত।
রাজউকের অনুমোদনের নকশা সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘনকে রাজউক / কর্তৃপক্ষের দ্বারা দন্ড দেওয়া হতে পারে ।
আপনার কেন রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট লাগবে
(১) যদি কোনও বিল্ডিংয়ের মালিক নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট না পান তবে উক্ত বিল্ডিং মর্টগেজ দিয়ে ব্যাংক ঋণ জন্য আবেদন করতে পারবেন না। মালিক কোনও বীমা কভারেজও পাবেন না।
(২) দ্বিতীয়ত, মালিক জল, গ্যাস এবং বিদ্যুতের অ্যাকাউন্ট ও সংযোজন এবং সিটি কর্পোরেশনের পয়ঃনিষ্কাশন সংযোজন পাবেন না । নিয়ম অনুসারে, ইউটিলিটি পরিষেবা সংস্থাগুলি রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট ছাড়াই গ্যাস, পানি এবং বিদ্যুত সংযোগ সরবরাহ করতে পারবেন না।
(৩) তৃতীয়ত, মালিক (জমির মালিক / অ্যাপার্টমেন্টের মালিক / মেঝের মালিক / ডেভেলপার) যথাযথ সরকারী নিবন্ধকরণ প্রক্রিয়া সহ সম্পত্তি বিক্রয় / কিনতে পারবেন না। এখন, রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট সরকারী সম্পত্তি নিবন্ধকরণ প্রক্রিয়ার জন্য বাধ্যতামূলক।
(৪)সর্বশেষে, রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট ছাড়াই কোনও বিল্ডিং ব্যবহার করা আসলে হিসেবে গণ্য হয়। রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট সম্পর্কিত আইন লঙ্ঘন করার জন্য দণ্ডিত করা হতে পারে ।
কিভাবে পাবো রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট
(১) নির্মাণ প্রকল্পের আংশিক অথবা সম্পূর্ণ কাজের উপর আবেদনকারী নির্ধারিত ছক (ফরম-৪০১) এর মাধ্যমে একটি সমাপ্তি প্রতিবেদন দাখিল করিবেন এবং কর্তৃপক্ষের নিকট উক্ত প্রকল্পের আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্রের জন্য আবেদন করিবেন এবং কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে আংশিক বা সম্পূর্ণ বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্র লাভ করিবার পূর্ব পর্যন্ত উক্ত ইমারত বা কাঠামো আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ কোন অবস্থাতেই ব্যবহার করা যাইবে না।
(২) নিয়োজিত কারিগরী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ নির্ধারিত ছক (ফরম-৪০২) এর মাধ্যমে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করিবে এবং উক্ত প্রত্যয়নপত্রে নির্মাণ কাজ নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী তাহার বা তাহাদের তদারকীতে সম্পন্ন হইয়াছে ইহার উল্লেখ থাকিতে হইবে।
(৩) নিযুক্ত কারিগরী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ তাহার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে যে যে কাজের তদারকী করিয়াছেন তাহার তদারকী প্রতিবেদন দাখিল করিতে হইবে।
(৪) কর্তৃপক্ষ আবেদনকারী ও কারিগরী ব্যক্তিগণের উপস্থিতিতে আবেদনপত্র প্রাপ্তির ১৫ (পনের)
দিনের মধ্যে ইমারতটি পরিদর্শন করিবে।
(৫) ইমারতটি অনুমোদিত নকশা মোতাবেক নির্মিত হইয়াছে কিনা তাহা পরীক্ষান্তে লিপিবদ্ধ করা হইবে এবং পরিদর্শনের ১৫(পনের) দিনের মধ্যে নির্ধারিত ছক (ফরম-৪০৩) এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ ইমারতের নকশা অনুমোদনসহ বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্র প্রদান করা হইবে।
(৬) ইমারত বা প্রকল্পটি অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় ঘটাইয়া নির্মাণ করা হইলে কর্তৃপক্ষ উহা ব্যবহারের জন্য কোন সনদপত্র প্রদান করিবে না এবং সেই ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনের ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে নির্ধারিত ছক (ফরম-৪০৪) এর মাধ্যমে বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্র প্রদান না করিবার কারণ জানাইয়া দিবে এবং আবেদনকারীকে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণপূর্বক উক্ত ইমারতটি অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী নির্মাণ করিবার প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করিবে।
(৭) আবেদনকারী উপ-বিধি (৬) এ বর্ণিত আদেশ অনুযায়ী সকল ধরনের ত্র“টি মেরামত করিয়া এবং অন্যান্য আরোপিত শর্ত, যদি প্রদান করা হয়, পালন করিয়া নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্রের জন্য নির্ধারিত ছক (ফরম-৪০৫) এর মাধ্যমে পুনঃআবেদন করিতে পারিবে।
(৮) কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর পুনঃআবেদন বিবেচনা করিয়া নির্ধারিত ছক (ফরম-৪০৩) এর মাধ্যমে বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্র প্রদান করিবে বা নির্ধারিত ছক (ফরম-৪০৪) এর মাধ্যমে আবেদন প্রত্যাখান করিবে।
(৯) বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্রের আবেদন প্রত্যাখান করা হইলে আবেদনকারী নগর উন্নয়ন কমিটির নিকট লিখিত আপিল আবেদন করিতে পারিবে এবং উক্ত কমিটি পর্যালোচনাপূর্বক বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্র প্রদান অথবা প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করিবে।
(১০) আবেদনকারীর চাহিদামতে, প্রযোজ্যক্ষেত্রে আংশিক বসবাস বা ব্যবহারের জন্য বসবাস বা
ব্যবহার সনদপত্র দেওয়া যাইবে।
কে আপনাকে সহায়তা করতে পারে
রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় আপনার কারিগরি ব্যক্তি (সার্টিফাইড আর্কিটেক্ট এবং সার্টিফাইড ইঞ্জিনিয়ার বা পরামর্শক) এর সহায়তার প্রয়োজন হবে যার সহায়তায় আপনি এর মধ্যে রাজউকের বিল্ডিং নির্মাণ অনুমোদনের ডিজাইন টি আগে করিয়েছিলেন এবং বিল্ডিং নির্মাণ ও নির্মাণ তদারকির জন্য বিশদ কারিগরী সহযোগিতা নিয়েছিলেন ।
পরামর্শক বা সার্টিফাইড আর্কিটেক্ট এবং সার্টিফাইড ইঞ্জিনিয়ার আপনাকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রদান করবে ।
(১) অনুমোদিত স্থাপত্য নকশার ভিত্তিতে নির্মিত ইমারতের নির্মাণ নকশা
(২) বিল্ডিং স্ট্রাকচারাল ডিজাইন
(৩) বিল্ডিং সার্ভিসেস ডিটেলস
(৪) ইমারতের সমাপ্তি প্রতিবেদন
রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট এর মেয়াদ
বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্র নবায়ন:
(১) বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্রের মেয়াদ হইবেপ্রদানের তারিখ হইতে ৫ (পাঁচ) বৎসর এবং প্রতি ৫ (পাঁচ) বৎসর অন্তর ইহা নবায়ন করিতে হইবে।
(২) বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্র নবায়নের জন্য নির্ধারিত ফি সহ নির্ধারিত ছক (ফরম-৪০৬) এর মাধ্যমে মেয়াদ উত্তীর্ণের অন্যূন ৯০(নব্বই) দিন পূর্বে কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করিতে হইবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন না করিলে নবায়ন ফি এর ১০ (দশ) গুন পরিমাণ ফি জরিমানা হিসাবে প্রদান করিতে হইবে।
(৩) বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হইলে সংশি-ষ্ট ভবনের নির্মাণ অনুমোদন আপনা আপনি বাতিল বলিয়া বিবেচিত হইবে এবং উক্ত ভবনের পুনরায় নির্মাণ অনুমোদন গ্রহণের জন্য প্রযোজ্য ফি এর ১০(দশ) গুন ফি এবং আইন অনুযায়ী ইমারত নির্মাণ কমিটি কর্তৃক ধার্য্যকৃত জরিমানা প্রদান পূর্বক আবেদন করিয়া নির্মাণ অনুমোদনপত্র গ্রহণ করিতে হইবে।
(৪) উপ-বিধি (২) অনুযায়ী আবেদন প্রাপ্তির ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষ আবেদনে উল্লিখিত ইমারত পরিদর্শন করিবে এবং পরিদর্শনকালে যদি কোন নিয়মের ব্যতিক্রম বা অননুমোদিত ব্যবহার সনাক্ত না হয় তাহা হইলে আবেদন মঞ্জুর করিয়া নির্ধারিত ছক (ফরম-৪০৭) এর মাধ্যমে বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্র নবায়ন করিবে; অন্যথায় সনাক্তকৃত নিয়মের ব্যতিক্রম বা অননুমোদিত ব্যবহার লিপিবদ্ধ করিবে এবং উক্তরূপ অননুমোদিত ব্যবহার বা ব্যতিক্রমের জন্য নবায়নের আবেদন নির্ধারিত ছক (ফরম-৪০৮) এর মাধ্যমে প্রত্যাখান করতঃ আবেদনকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
(৫) বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্র নবায়নের আবেদন প্রত্যাখাত হইলে আবেদনকারী নগর উন্নয়ন কমিটি বরাবরে লিখিত আপিল আবেদন করিতে পারিবে।
Comentários